রংপুর অফিস : রংপুরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সংঘর্ষে আদালত চত্বর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের জামিন শুনানি শেষে তাকে জেলহাজতে নেওয়ার পথে আদালত চত্বরে তার প্রতি ডিম ও জুতা নিক্ষেপ করা হলে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে পাঁচ পুলিশসহ কমপক্ষে ২৫ জন আহত হন। এ সময় পুলিশ বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ার গ্যাস শেল নিক্ষেপ ও রাবার বুলেট ছুঁড়ে করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। শুনানি শেষে আদালত মইনুলের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেন। আগামী ২২ নভেম্বর মামলার পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মানহানির মামলায় গ্রেপ্তারকৃত ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জামিন শুনানির জন্য রংপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আনা হয়। মইনুলকে আদালতে হাজির করা হবে, এমন খবর পেয়ে রংপুর জেলা ও মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীরা সকাল থেকে আদালতের সামনে ঝাড়ু হাতে নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
জামিন শুনানি শেষে জেলহাজতে নেওয়ার সময় মইনুল হোসেনকে লক্ষ্য করে ডিম ও জুতা নিক্ষেপ করা হলে বিএনপিপন্থি আইনজীবী ও বিএনপির একটি গ্রুপের সঙ্গে আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবী, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এতে দুই গ্রুপের কমপক্ষে ২৫ জন আহত হন।
জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট দিলশাদ হোসেন মুকুল মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হন। এ ছাড়া আহত বেশ কয়েকজনকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের বিষয়টি স্বীকার করে জানান, পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দুই রাউন্ড টিয়ার গ্যাস শেল এবং চার রাউন্ড রাবার বুলেট ছুঁড়েছে। সংঘর্ষে পাঁচ পুলিশসহ কয়েকজন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
ব্যারিস্টার মইনুলের পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট একরামুল হক ও অ্যাডভোকেট শফি কামলা বলেন, ‘জামিন শুনানির সময় আদালতের এজলাসে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরবর্তীকালে এই উত্তেজনা আদালত চত্বরে ছড়িয়ে পড়লে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে কয়েকজন আহত হন।’ তারা জানান, আদালত ব্যারিস্টার মইনুলের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক তৌহিদুল রহমান টুটুল বলেন, ‘আমরা আদালত চত্বরে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করছিলাম। কিন্তু জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে বিএনপি যে কাণ্ড ঘটালো, তা কাম্য ছিল না।’
গত ২২ অক্টোবর মানবাধিকার কর্মী রংপুর নগরীর সুরুজ মিয়ার স্ত্রী মিলি মায়া বেগম রংপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্টেট আদালতে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনে বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন। ওই দিন আদালতের বিচারক আরিফা ইয়াসমিন মুক্তা মামলাটি আমলে নিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে রাতেই ঢাকায় মইনুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গত ১৬ অক্টোবর মধ্যরাতে একাত্তর টেলিভিশনের টকশোতে সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে উদ্দেশ করে ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেনের এক মন্তব্যের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ সারা দেশে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠে। সেই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা হয়।
No comments:
Post a Comment