নিজস্ব প্রতিবেদক : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিতর্কিত এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রত্যাখ্যাত ইভিএম ব্যবহারের প্রতিবাদ, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক গায়েবী মামলায় বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও হয়রানি বন্ধ এবং বিগত খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে চরম বিতর্কিত ভূমিকা পালনকারী ভোট ডাকাতির কারিগর প্রশাসনিক ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের নির্বাচনী তফশীল ঘোষণার পূর্বে খুলনা থেকে প্রত্যাহারের দাবিতে খুলনা মহানগর বিএনপি ২৫ অক্টোবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে।
স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি হিসেবে সরকারি নিপীড়ন ও পুলিশী অপতৎপরতায় কোনরকম সাংগঠনিক রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনায় অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বিএনপি। ইতোমধ্যে আগামী ২৭ অক্টোবর নির্বাচন কমিশন কর্তৃক খুলনায় ইভিএম মেলা আয়োজনের সংবাদে আমরা হতাশ এবং ক্ষুব্দ হয়েছি। পূর্বে ব্যবহৃত বিশ্বের বহু উন্নত দেশে ইতিমধ্যে ইভিএম ব্যবহার বন্ধ হয়ে গেছে। তাছাড়া দেশের প্রায় সকল রাজনৈতিক দল ইভিএম ব্যবহারের তীব্র আপত্তি জ্ঞাপন করেছে। পরীক্ষামূলকভাবে স্থানীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার কারিগরি নানাবিধ জটিলতায় জনমনে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। একইসাথে উল্লেখ্য যে, বিএনপি’র পক্ষ থেকে ইভিএম ব্যবহারে কি কি কারিগরি জটিলতা এবং ত্রুটি ভোট গ্রহণে অস্বচ্ছতা ও পক্ষপাতিত্ব সৃষ্টি করতে পারে, তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা উপস্থাপন করা হয়েছে। এত অনাস্থা এবং আপত্তি স্বত্ত্বেও ইভিএম কে এত গুরুত্ব দিয়ে নির্বাচন কমিশনের নানা, উদ্যোগ ও ইভিএম মেলার আয়োজনে আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাই।
গত ১৫ আগষ্ট ২০১৮ থেকে এ পর্যন্ত খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ অহেতুক, কোন ঘটনা সংগঠন ছাড়াই শুধুমাত্র হয়রানির অসৎ উদ্দেশ্যে নগরীর খুলনা সদর, সোনাডাঙ্গা, খাশিলপুর, দৌলতপুর, খানাজাহান আলী, লবনচরা ও আড়ংঘাটা থানায় ১৫টি মামলায় ২৭২ জন জ্ঞাত এবং ১৬৮২ জন্য অজ্ঞাতনামাসহ মোট ১৯৫৪ জন্য নেতাকর্মীকে আসামী করে ‘গায়েবী’ মামলা দায়ের করেছে। মামলাসমূহে ইতিমধ্যে ৩০ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে এবং একইসাথে অজ্ঞাত নামা আসামী থাকার সুযোগে যে কাউকে হয়রানি ও গ্রেফতার বাণিজ্য চালিয়ে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে বাড়ীছাড়া/এলাকাছাড়া করেছে।
নগরীর কোথাও বিএনপি’র নেতাকর্মীরা একত্রিত হওয়া তো দূরের কথা- তাদের স্বাভাবিক ব্যক্তিগত নাগরিক জীবন সম্পূর্ণরূপে বিপর্যস্ত। দলীয় কার্যালয়সমূহ তালাবদ্ধ থাকছে। কার্যালয়ের ফটকে পুলিশ পাহারা বসিয়ে রাখছে। এমতাবস্থায় নির্বাচনের প্রস্তুতি কাজ পুরোদস্তর ব্যহত হচ্ছে।
এটি সরকারের বিরোধী দলকে সম্পূর্ণ কোনঠাসা বা লাপাত্তা করে একতরফা নির্বাচনের ষড়যন্ত্রকে বাস্তবায়নের নীলনকশায় নির্বাচন কমিশন এই দূরহ অবস্থা অবসানে অতি দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে সকল দলের অংশগ্রহণে অবাধ নিরপেক্ষ অর্থবহ নির্বাচনের জনআকাঙ্খা বাস্তবায়ন সম্ভপর হবে না।
একথা সর্বজনবিদিত বিগত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে খুলনার আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সিভিল প্রশাসনের ব্যাপক অংশ সরকারি দলের প্রার্থীর পক্ষে নির্লজ্জভাবে ভোট ডাকাতিতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করেছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিসাইডিং অফিসারসহ অন্যান্য নির্বাচনী কর্মকর্তারা বিপুল অংশ দলীয় কর্মীর ভূমিকায় অবতীর্ণ ছিল। প্রশাসনের এসকল বিতর্কিত দলীয় আনুগত্য কর্মকর্তারা বিশেষ করে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চিহ্নিত কর্মকর্তারা খুলনার প্রশাসনে দায়িত্বে বহাল থাকলে সুষ্ঠ নিরপেক্ষ অবাধ নির্বাচনের কোন নূন্যতম সম্ভাবনা নেই। নির্বাচনের তফশীল ঘোষণার পূর্বেই নির্বাচনকে বাধাহীন করতে এসকল প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের খুলনা থেকে প্রত্যহার অতি আবশ্যক বলে আমরা মনে করি।
বিনীতভাবে এবং দৃঢ়তার সাথে আমরা খুলনা মহানগর বিএনপি মনে করি, দেশে একটি অবাধ সুষ্ঠ নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে আগামী নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের আস্থা সৃষ্টি ব্যতীত বিতর্কিত ইভিএম ব্যবহারের কোন উদ্যোগ গ্রহণ না করে, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গায়েবী মামলা প্রদান বন্ধ, অকারনে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের বাড়ীতে তল্লাশী ও হয়রানি বন্ধ, নির্বাচন প্রস্তুতিতে বাধাহীনভাবে রাজনৈতিক সাংগঠনিক কাজ করার সুযোগ সৃষ্টিতে নির্বাচন কমিশনের উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বিতর্কিত দলবাজ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের প্রত্যহার করে তদস্থলে নিরপেক্ষ পেশাদার কর্মকর্তাদের পদায়ন করার প্রয়োজনীয় ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ আমরা একান্তভাবে কামনা করছি।
এ সময় বিএনপি নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নজরুল ইসলাম মঞ্জু, সাবেক এমপি কাজী সেকেন্দার আলী ডালিম, মীর কায়সেদ আলী, শেখ মোশারফ হোসেন, জাফরউল্লাহ খান সাচ্চু, অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম, রেহানা আক্তার, স ম আব্দুর রহমান, ফখরুল আলম, আসাদুজ্জামান মুরাদ, সিরাজুল হক নান্নু, ইকবাল হোসেন খোকন, শেখ সাদী, একরামুল হক হেলাল, আনজিরা খাতুন প্রমুখ।
No comments:
Post a Comment