চট্টগ্রাম অফিস : আকরাম খান, মোহাম্মদ রফিক, মিনহাজুল আবেদীন নান্নু কিংবা খালেদ মাসুদ, খালেদ মাহমুদ ও হাবিবুল বাশাররা স্বপ্ন দেখাতেন বড় দল হওয়ার। ম্যাচের পর ম্যাচে ব্যর্থতার দায় নিতেন। স্বপ্ন দেখাতেন বদলে যাওয়া বাংলাদেশের।
২০১৫ বিশ্বকাপের পর সেই পালে লাগল হাওয়া। রঙিন পোশাকে হাল ধরলেন মাশরাফি। সময়ের ধারাবাহিকতায় পাল্টাল চিত্র। সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ এগিয়ে এলেন। যোগ হলেন মুস্তাফিজ, সৌম্য, মিরাজ ও সাব্বিরদের মতো তরুণরা। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এখন বাংলাদেশ বড় দল। এখন বাংলাদেশ অনেক পরিণত। হেসে খেলে হারিয়ে দিতে পারে যেকোনো দলকে। ঘুরে দাঁড়াতে পারে যেকোনো সময়ে, যেকোনো পরিস্থিতিতে।
যে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম দশ ম্যাচে কোনো জয় পায়নি সেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেষ ১১ ম্যাচে অপরাজিত বাংলাদেশ। মঙ্গলবার সেই তালিকায় যোগ হলো আরেকটি। টানা ১২ ম্যাচ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অপরাজিত বাংলাদেশ । আর এ জয়ে বাংলাদেশ জিতে নিল সিরিজ। বাংলাদেশের ২৩তম এবং জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দশম সিরিজ জয়।
বন্দর নগরী চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস জিতে জয়ের অর্ধেক কাজ আগেই করে রেখেছিলেন মাশরাফি। শিশির ভয়ে গেল দুদিনই কপালে ভাজ ছিল টিম ম্যানেজম্যান্টের। মাশরাফি টস জেতায় স্বস্তি ফিরে আসে। বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে সফরকারীদের ২৪৬ রানে আটকে রাখে দল। পরবর্তীতে সেই লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলে ৭ উইকেট হাতে রেখে। এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ বাংলাদেশের।
লক্ষ্য ছিল হাতের নাগালেই, ২৪৭ রান। দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন লিটন ও ইমরুল। দুজনের ১৪৮ রানের জুটিতে সহজেই জয় দেখছিল বাংলাদেশ। দুজনই তখন পৌঁছে হাফ সেঞ্চুরিতে। ইনিংস বড় করার কাজ করছিলেন। কিন্তু হঠাৎই লিটন হাল ছাড়লেন। সিকান্দার রাজার বল তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন কভারে। ৭৭ বলে ৮৩ রানের ইনিংসটি শেষ হয় ১২ চার ও ১ ছক্কায়।
তিনে নামা ফজলে রাব্বী আবারও হতাশ করেন। অভিষেকে ডাকের তিক্ত স্বাদ পাওয়া ব্যাটসম্যান আজও শূন্য রানে সাজঘরে ফেরেন। বাংলাদেশের চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে অভিষেকের পর জোড়া ডাকের তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি রাব্বী। লিটন ও রাব্বীর দ্রুত বিদায়ে মনোবল হারায়নি বাংলাদেশ। একপ্রান্তে ইমরুল ছিলেন অবিচল। আর মুশফিক বরাবরের মতোই সুন্দর। দুজনের ৫৯ রানের জুটিতেই শেষ হতে পারত ম্যাচ। কিন্তু নিজের মেজাজ হারিয়ে নার্ভাস নাইন্টিজে উইকেট বিসর্জন দিলেন ইমরুল।
আহ! জোড়া সেঞ্চুরির সূবর্ণ সুযোগ মিস। রাজার বলে এগিয়ে এসে মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন লং অফে। ১১১ বলে ৭ বাউন্ডারিতে ৯০ রানের ইনিংসটি শেষ হয় ওখানেই। জয়ের বাকি কাজটুকু সারেন মিথুন ও মুশফিক। জয়ের রানটা আসে মিথুনের ব্যাট থেকে। মিথুন ২১ বলে ২৪ ও মুশফিক ৫২ বলে ৪০ রানে অপরাজিত।
এর আগে বোলাররা বাংলাদেশকে দিয়েছিলেন জয়ের ভীত। প্রথম ওয়ানডের পর পেসার সাইফউদ্দিন আজও নেন ৩ উইকেট। একমাত্র নাজমুল অপু বাদে বাকি সবাই পেয়েছেন উইকেটের স্বাদ। ম্যাচসেরা পুরস্কারটা উঠেছে তরুণ সাইফউদ্দিনের পাশে। দীর্ঘদিন পর দলে ফিরে সাইফউদ্দিন নিজেকে নতুন করে চেনাচ্ছেন বড় মঞ্চে।
জিম্বাবুয়ের পরাজয়ের দিনে ব্যাট হাতে দারুণ লড়াই করেন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। তিনে নামা ব্রেন্ডন টেলর করেন সর্বোচ্চ ৭৫ রান। ৪২ রানে রিভিউ নিয়ে বেঁচে যাওয়া টেলর ফেরেন মাহমুদউল্লাহর বলে এলবিডব্লিউ হয়ে। মাহমুদউল্লাহ টেলর ও উইলিয়ামসের ৭১ রানের জুটি ভাঙার পর সিকান্দার রাজা ৪৯ রান করে দলের স্কোর সচল রাখেন। কিন্তু বেশিদূর নিয়ে যেতে পারেননি। মাশরাফি তাকে ফেরালে তাদের বড় ইনিংসের স্বপ্ন শেষ হয়। ২৪৬ রানের লড়াকু পুঁজি পেলেও বাংলাদেশের সামনে তা হয়ে উঠে মামুলী। তাইতো চওড়া হাসি দিয়ে সাগরপাড়ের মিশন শেষ করল টাইগাররা।
অনেক জয়ের সাক্ষী হয়ে আছে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ স্টেডিয়াম। দক্ষিণ আফ্রিকাকে সিরিজ হারানোর সুখস্মৃতি, বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয় এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৬১ রানে অলআউটের রেকর্ড তো এখানেই। পয়মন্ত এ ভেন্যুতেই এবার লাল-সবুজের পতাকা আরেকবার উড়ল। উড়ল বিজয়ের নিশান। ইনজুরির কারণে সাকিব ও তামিম নেই। দলের দুই সিনিয়রকে ছাড়া দল যে ভালো খেলতে পারে, দাপটের সঙ্গে জিততে পারে তার প্রমাণ পেল ক্রিকেট বিশ্ব। এ যেন বড় দল হয়ে উঠার প্রতিচ্ছ্ববি।
No comments:
Post a Comment