নিজস্ব প্রতিবেদক : খুলনা জেলাধীন তেরখাদা উপজেলা সদরসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠেছে বহু সমবায় সমিতি। সাইনবোর্ডের আড়ালে এসব সমিতি দেদারছে সুদের কারবার করছে। এখানে মানা হয় না সরকারি কোন নিয়ম-নীতি। ইচ্ছা খুশিমত সুদের হার ধার্য্য ও গ্রহীতাদের বিপাকে ফেলে আদায় করা হচ্ছে সুদের টাকা। ভুক্তভোগীরা বলেছেন, বিপদে পড়েই তারা সমিতির ঋণ নেন, যে কারণে তাদের নিয়ম মেনেই সুদ গুনতে বাধ্য হন। এর ফলে অনেক ঋণ গ্রহীতা সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে। সচেতন মহল বলেছেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে সমিতিগুলোতে সরকারি নিয়মের মধ্যে আনতে না পারলে আরও ঋণ গ্রহীতাকে পথে বসতে হবে।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, সমিতির সাইনবোর্ডের আড়ালে অনেক মাল্টিপারপাস কোম্পানি খুলে বসেছে। যে কারণে বেশি প্রতারিত হচ্ছে সাধারণ জনগন। উপজেলা সমবায় অফিস সূত্রে জানা গেছে, তেরখাদা উপজেলায় সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৭ সালে ৭৭ টি ও ২০১৮ সালে তা বেড়ে ৮১ টি সমিতি রেজিস্ট্রেশন নিয়েছে। ২০১৮ সালে রেজিষ্ট্রেশনের কোন আবেদন জমা পড়েনি। এর বাইরে যে সব সমিতি এখনও রেজিষ্ট্রেশনের আওতায় আসেনি বা নেয়নি তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা শংকর চন্দ্র বিশ্বাস। তিনি জানান, রেজিষ্ট্রেশন বিহিন সমিতি ও অবৈধ মাল্টিপারপাস প্রতিষ্ঠানে সাধারণ জনগনের লেনদেন না করাই শ্রেয়। এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে জনগনের সহযোগিতা দরকার। সুত্রে প্রকাশ, সম্পূর্ণ বে-আইনী ভাবে সরকারি নিয়ম না মেনে প্রতিটি সমিতি বাৎসরিক ১০ শতাংশ হারে ঋণের লাভ গ্রহণের নিয়ম থাকলেও তেরখাদার অধিকাংশ সমিতি বাৎসরিক ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত লাভ আদায় করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কাটেংগা বাজারের ব্যবসায়ী মো. জনাব আলী শেখ, বাদশা, ইমদাদুল হক টনিসহ বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও চায়ের দোকানীরা অভিযোগ করে বলেন, উপজেলা সদরের বাজারগুলোতে বিভিন্ন সমিতি অঘোষিত পাশ বইয়ের মাধ্যমে চড়া সুদ আদায় করছে। প্রতিদিন কিস্তি আদায়, ৯০ দিনের মধ্যে কিস্তির সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ, সুদের হার ১০%, তাহলে ১ বছরে ৪০% হারে সুদ নিচ্ছে আর আমাদের টাকা নিয়ে সমিতির কর্মকর্তারা গাড়ি বাড়ি ব্যবসা বানিজ্য করে বিলাস বহুল জীবন জাপন করছে। আবার কয়েকটি সমিতি রয়েছে যে সব সমিতিগুলোর মুলধন খাতা কলমে ঠিক থাকলেও সমিতির অধিকাংশ কর্মকর্তারা মোটা অংকের ঋণ গ্রহণ করে কোন প্রকার মুনাফা জমা দিচ্ছে না। যে কারণে, সমিতির গ্রাহকরা হারাচ্ছে প্রতি বছরের মুনাফার একাংশ। এদিকে রেজিষ্ট্রেশনকৃত সমিতিগুলোই যথানিয়মে হয় না অডিট। সরকারি নিয়মের ধারে কাছে না ভীড়ে সমিতিগুলো সাধারন গ্রাহকদের সাথে প্রতারনা করছে। সূত্রে আরো জানা গেছে তেরখাদা উপজেলা সদরের কাটেংগা বাজার, জয়সেনা বাজার, তেরখাদা বাজার, শেখপুরা বাজার, পাতলা বাজার, সাচিয়াদাহ বাজার, বারাসাত আবুল বাজারসহ বিভিন্ন গ্রামে নামে বেনামে রেজিষ্ট্রেশন বিহীন সমিতি রয়েছে। ঐসব সমিতির বাৎসরিক এজিএম ও সদস্য কর্তৃক সমিতির কার্য নির্বাহী কমিটি গঠনের নিয়ম থাকলেও তারা ইচ্ছা মোতাবেক নিজেদের ভিতর থেকে কর্মকর্তা বানিয়ে মোটা অংকের টাকা নিয়ে ব্যবসা করছেন। আর এ ব্যবসায় কর্মকর্তারা লাভবান হলেও মুনাফা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ সদস্য। সমিতির সাধারণ সদস্যদের প্রশ্ন এসব অনিয়ম দেখার দায়িত্ব কার। এদিকে বছরের পর বছর এসব সুদে কারবারি চক্র তাদের কার্যক্রম চালিয়ে গেলেও এদের বিরুদ্ধে উপজেলা সমবায় অফিস ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় দিন দিন তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। জরুরী ভিত্তিতে এদের কার্যক্রম বন্ধ পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন এলাকার সচেতন মহল। পাশাপাশি সমিতিগুলোর অডিট ও যে সব সমিতির রেজিষ্ট্রেশন নেয়নি তাদের বিরুদ্ধে ও আইনানুগত ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
No comments:
Post a Comment