এস এম মাহবুবুর রহমান, খুলনা থেকে : মাত্র ১২শ টাকা পুঁজি নিয়ে মৎস্য চাষ শুরু করে এখন ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করছে রূপসার মফিজুল ইসলাম। শ্রম ও মেধা খাটিয়ে জিরো থেকে হিরো হওয়ার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি। একটি ঘের থেকে ২১ টি ঘেরের পাশাপাশি গড়ে তুলেছেন গরুর খামার। সেখানেও পুজি খাটছে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা। এসব অর্থ তিনি কারো কাছ থেকে ধার দেনা বা ব্যাংক ঋণ করে নয়। সবই তার পরিশ্রমের ফল।
বেকারত্ব থেকে মুক্তি পেতে কোন প্রকার হতাশায় না ভুগে মফিজুল ইসলাম ১৯৯২ সালে মাত্র ১২’শ টাকা পুঁজি নিয়ে খুলনা-মংলা মহাসড়কের পাশে ২ বিঘা জমিতে শুরু করেন মৎস্য চাষ। পুঁজি কম থাকায় তিনি চাইনা পুটি, তেলাপিয়া ও রুই, মৃগেল মাছের পোনা ছেড়ে নিয়মিত পরিচর্যা করতে থাকেন। বছর শেষে ঘের থেকে লাভ হয় ২০ হাজার টাকা। প্রথম বছর ঘেরে মাছের উৎপাদন ভালো এবং ধারনার অধিক লাভ হওয়ায় তার মৎস্য চাষে আগ্রহ বেড়ে যায়। পরের বছর ঘেরের সংখ্যা বাড়িয়ে সম্পুর্ণ পুঁজি খাটিয়ে মৎস্য চাষে আরো মনোযোগী হন। এরপর আর তাকে পিছনে ফিরতে হয়নি। কয়েক বছরের মধ্যে খুলনা-মংলা মহাসড়কের পাশর্^বর্তী সিএন্ডবি’র ক্যানেল সমবায় সমিতির মাধ্যমে বার্ষিক বন্দবস্ত নিয়ে বেশ বড় পরিসরে চলে তার মাছের চাষ। বর্তমানে মফিজুলের ২১ টি সাদা মাছের ঘের রয়েছে। যাতে পুঁজি খাটছে ২০ লাখ টাকা। এসব ঘের থেকে প্রতি বছর খরচ বাদে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা আয় তার। ঘের দেখাশোনা ও খাবার দেয়ার জন্য নিজের অংশ গ্রহন ছাড়া কর্মচারী রয়েছে ৪ জন। তার এই ২১ টি ঘেরে রুই, কাতলা, মৃগেল, চাইনা পুটি, তেলাপিয়া ও পাঙ্গাশ মাছ রয়েছে। পাশাপাশি গত ১২ বছর ধরে তিনি মাছের ডিম থেকে রেনু পোনা উৎপাদন করে পাইকারী বিক্রি করছেন। বরিশাল, গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট, মোল্লাহাট, ফকিরহাট, মংলা, ঘাটভোগসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে খুচরা ও পাইকারি ক্রেতারা এসে এখান থেকে সাদা মাছের রেনু পোনা নিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন ছোট মাছের খাবার হিসেবে সরিষার খৈল ভিজিয়ে রেখে দেওয়া হয়। আর বড় মাছের খাবার হিসেবে খৈল, ভুষি, চিংড়ির মাথাসহ বিভিন্ন খাবার দিয়ে থাকেন। পাশাপাশি ঘেরের পানি দুষিত হলো কিনা সে দিকে রাখেন সজাগ দৃষ্টি। এজন্য মাঝে মাঝে পানি শোধন কিটনাশক প্রয়োগ করতে হয় বলে জানান তিনি। মৎস্য চাষে ভাগ্যের চাকা ঘুরানো মফিজুল ইসলাম জিরো থেকে হিরো হলেও এখনো নিজে ঘেরে নেমে মাছের পরিচর্যা করেন। তিনি বলেন টাকা হলেও কাজের প্রতি আমার কোন সংকোচ নেই। এই ঘের করেই আমি বড় হয়েছি। মৎস্য চাষে মফিজুলের কোন প্রশিক্ষণ নেয়া না থাকলেও নিজেই এখন প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। তার কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এলাকার আরো ২০ জন যুবক তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছে। তবে মৎস্য চাষে এত বড় সাফল্য অর্জন করলেও আজও তার ভাগ্যে সরকারি কোন পুরস্কার জোটেনি। এ নিয়েও তার নেই কোন আফসোস। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, এ পর্যন্ত ৪ বার রাতের অন্ধকারে দুস্কৃতিকারীরা ঘেরে বিষ মেরে ব্যাপক ক্ষতি করেছে। একবার ১৫ লাখ টাকা মূল্যের চারা মাছ মারা যায়। মাছ চাষের পাশাপাশি তিনি গড়ে তুলেছেন গরুর খামার। তার খামারে বর্তমানে ১৪ টি গবাদি পশু রয়েছে। এর মধ্যে ৯টি গাভী ও ৫টি এড়ে রয়েছে। খামারের ৯টি গাভীর মধ্যে ৭টি গাভী থেকে প্রতিদিন গড়ে ৩০ কেজি দুধ উৎপাদন হচ্ছে।
মৎস্য চাষী মফিজুল ইসলাম বর্তমানে রূপসা উপজেলা শ্রমিক লীগ এর সভাপতি ও হকার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। কিশোর বয়স থেকেই তিনি আওয়ামী লীগ রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। রাজনীতি সম্পর্কে তিনি বলেন জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ লালন করে আওয়ামী লীগ করে আসছি। দলের কাছে আমার কোন কিছু চাওয়া পাওয়ার নেই। আল্লাহপাক আমাকে অনেক কিছু দিয়েছেন। সু-দিন বা দুর্দিন সব সময় দলের সাথে ছিলাম আছি এবং থাকবো।
No comments:
Post a Comment