লালমনিরহাট প্রতিনিধি : এক উঠানে মসজিদ ও মন্দির ধর্মীয় সম্প্রতির এক উজ্বল দৃষ্টান্ত। এক পাশে উলুধ্বনী অন্যপাশে চলছে জিকির। এক পাশে ধুপকাটি অন্য পাশে আতরের গন্ধে মুখোর। এভাবে ধর্মীয় সম্প্রিতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যুগ যুগ ধরে চলছে পৃথক দুইটি ধর্মের উপাসনালয়।
সীমান্তবর্তি লালমনিরহাট জেলা শহরের কালীবাড়ি এলাকার পুরান বাজার জামে মসজিদ ও কালীবাড়ী কেন্দ্রীয় মন্দিরটি একই উঠানে রয়েছে সম্প্রিতির বন্ধনে। যে যার মত ধর্ম পালন করে চলে যাচ্ছেন। চলছে শারদীয় দূর্গাৎসব।
কেন্দ্রীয় কালীবাড়ী মন্দির কমিটির কোষাধ্যক্ষক সনদ চন্দ্র সাহা জানান, প্রায় দেড়শত বছর আগে কালীমন্দির হিসেবে এ মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়। যার কারনে এলাকাটির নামকরনও করা হয় কালীবাড়ী। বাজার গড়ে উঠলে বাজারের ব্যবসায়ী ও শহরের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মন্দিরের পাশেই এ পুরান বাজার জামে মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। সেই থেকে একটা উঠানে চলছে দুই ধর্মেরর দুই উপাসনালয়।
তিনি আরো জানান, পূজা শুরুর আগে মসজিদ ও মন্দির কমিটি বসে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সিদ্ধান্ত মতে, আযানের সময় থেকে প্রথম জামায়াত নামাজ পর্যন্ত মন্দিরের মাইক, ঢাক ঢোলসহ যাবতীয় শব্দ বন্ধ থাকে। ওই সময় পুরোহীত নীরবে পূজা করবেন ঢাক ঢোল ছাড়াই। নামাজের প্রথম জামায়াত শেষ হলে মন্দিরের কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়। সামান্যতম বিশৃঙ্খলা হয় না এখানে। তার জন্ম থেকে এভাবে চলতে দেখেছেন সনদ চন্দ্র সাহা।
পুরান বাজার জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফজল মিয়া জানান, ধর্মীয় সম্প্রীতির এটি এক জ্বলন্ত প্রমাণ। যুগ যুগ ধরে একই উঠানে চলছে নামাজ ও পূজা অর্চণা। নামাজের সময় মন্দিরের ঢাক ঢোল বন্ধ রাখা হয়। নামাজ শেষ হলে মন্দিরে পুজা চলে পুরোদমে। আযান ও নামাজে তো খুব বেশী সময় লাগে না। এ সময়টুকু তারা শব্দযন্ত্র বন্ধ রাখেন। কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা ছাড়াই যুগ যুগ ধরে এ সম্প্রীতির বন্ধনে ধর্মীয় উৎসব পালন করছেন বলে দাবী করেন তিনি।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফ জানান, ধর্মীয় সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ এ জেলার মানুষ। ধর্ম যার যার উৎসব সবার- এটাই এখানকার মানুষ লালন করে ও বিশ্বাস করে। যার মুর্তপ্রতিক এক উঠানে কেন্দ্রীয় কালীবাড়ী মন্দির ও পুরান বাজার জামে মসজিদ।
No comments:
Post a Comment