মঙ্গলবার (১ জানুয়ারী) দুপুরে বিএনপি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিংয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট খুলনার পক্ষ থেকে এ অভিযোগ করা হয়। প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রহসনের নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে অবিলম্বে নির্দলীয় সরকারের অধীনে পূনঃনির্বাচন দাবি করা হয়।
প্রেস ব্রিফিংয়ে খুলনা-২ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া নগর বিএনপি সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের ভোটার নিশ্চিত হয়েই কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। সেখানে তার আসনের অধিকাংশ কেন্দ্র পরিদর্শন করে তিনি সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২২ শতাংশ ভোট পড়তে পারে। কিন্তু সেখানে ৪৯ শতাংশ ভোট দেখানো হয়েছে। যা প্রহসন ছাড়া আর কিছু নয়।
তিনি এ নির্বাচনকে কলংকময়, ভোট ডাকাতি ও ভোট ছিনতাই- ইত্যাদি আখ্যাদিয়ে বলেন, নির্বাচনের জন্য কোন ধরণের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড করা হয়নি। দলীয় প্রার্থীরা স্বাভাবিক পোস্টারিং, মাইকিং ও গণসংযোগ করতে গিয়ে সরকারি দলের সমর্থকদের দ্বারা বাধাগ্রস্থ হয়েছেন। এমনকি তারা বাড়িতে গিয়ে দলীয় এজেন্টদের ভোট কেন্দ্রে না যেতে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেছে। নগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি দেব দুলাল বাড়ই বাপ্পির ভাই সজল বাড়ই’র নেতৃত্বে হেলমেট ও মটর সাইকেল বাহিনী সারা শহর দাপিয়ে আতংক তৈরি করেছে। প্যানা-পোস্টার ছিড়ে ফেলেছে।
অপরদিকে, বিনা ওয়ারেন্টে পুলিশ কর্মীদের গ্রেফতার করেছে। এমনকি ভোটের দিনও পুলিশ ২০-২২জন এজেন্টকে আটক করে। বিষয়টি নির্বাচন কমিশনার বেগম কবিতা খানম এবং রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানানো স্বত্বেও তাদের ছাড়া হয়নি। ভোট গ্রহণ শেষে রাতে সর্বনি¤œ ৭ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এর আগে বিএনপির পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষক মেহেদী হাসান দিপুকে গ্রেফতার করায় এজেন্টদের ট্রেণিংও দেওয়া সম্ভব হয়নি। এছাড়া দলের নগর সহ-সভাপতি শেখ মোশাররফ হোসেন ও মীর কায়ছেদ আলী, ১৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাফিজুর রহমান মনি, নগর বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল হাসান দুলু, বিএনপি নেতা চৌধূরী শফিকুল ইসলাম হোসেন, মাসুদ পারভেজ বাবু, নগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হুদা চৌধূরী সাগর, আনিছুর রহমান আরজু, তৌহিদুল ইসলাম খোকন, জাহিদ কামাল টিটো, জিএম মাহবুবুর রহমান, পারভেজ আলম, লোকমান হাকিমসহ দু’ শতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
নজরুল ইসলাম মঞ্জু অভিযোগ করেন, হুমকি উপেক্ষা করে শতভাগ এজেন্ট ভোট কেন্দ্রে গেলেও তাদের জোর করে বের করে দেওয়া হয়েছে। তাদের কর্মী, সমর্থক ও ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যেতে দেওয়া হয়নি। ভোটারদের বাড়ি থেকে ভোট কেন্দ্র পর্যন্ত স্তরে স্তরে আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা পাহারা বসিয়ে ভোটারদের ভয়ভীতি দিয়ে ভোট না দিয়েই বাড়িতে ফেরত যেতে বাধ্য করেছে।
এর মধ্যে স্ব স্ব ওয়ার্ডে বাপ্পি বাহিনী, রাঙ্গা বাদশা বাহিনী, শাহ আলম বাহিনী, নজু বাহিনী, সাইফুল বাহিনী, কালা কচি বাহিনী, মিয়া স্বপন বাহিনী, টিপু বাহিনী, হাফিজ বাহিনী, গাউস বাহিনী, হাবিব বাহিনী, মিঠু বাহিনী, আজম বাহিনী, জাকির বাহিনী, ডন বাহিনী এবং বুলু বিশ্বাস ও তার ছেলে পরশ বাহিনীসহ দায়িত্ব প্রাপ্তরা ভোট ডাকাতির নির্বাচন করেছে।
নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, সাত মাস আগে অনুষ্ঠিত কেসিসি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রথম খুলনাকে ভোট ডাকাতির মডেল করে। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার সারা দেশে খুলনা মডেলের নির্বাচন করলেন। তিনি ইভিএম প্রসঙ্গে বলেন, ইভিএম নিয়ে এত আলোচনার পরও বুথের মধ্যে ২জন করে লোক বসিয়ে রাখে আওয়ামী লীগ। ভোটার নিশ্চিত হওয়ার পর তারাই নৌকায় ভোট দিয়ে দেয়। প্রতিটি কেন্দ্রেই ছিল আওয়ামী লীগের একক নিয়ন্ত্রণ। বিএনপির এজেন্টদের বের করে দেওয়ায় প্রতিবাদের কেউ ছিল না।
তিনি আওয়ামী লীগকে ‘কাদের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন’ প্রশ্ন করে বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে কোন ভাবেই যে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, এটিই তার প্রমাণ। এতেই বোঝা গেছে, নির্বাচনে যাওয়া কতখানি আত্মহত্যার শামিল। তিনি খুলনার ৬টি আসনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে পুনঃনির্বাচন দাবি করেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে খুলনা-৩ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া রকিবুল ইসলাম বকুল বলেন, আওয়ামী লীগ সারাদেশে একটি প্রহসনের নির্বাচনের নাটক মঞ্চস্থ করেছে। নির্বাচন ছিল শুধুমাত্র সাজানো। তিনি এ ধরণের নাটকের নিন্দা জানিয়ে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে পুনঃনির্বাচন দাবি করেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে নগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনি, সাহারুজ্জামান মোর্ত্তজা, ঐক্যফ্রন্ট নেতা অ্যাড. আ.ফ. ম. মহসিন, বিজেপি সভাপতি এ্যাড. লতিফুর রহমান লাবু, জেপি সভাপতি মোস্তফা কামাল, মুসলিম লীগ সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. আক্তার জাহান রুকু, বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সিরাজউদ্দিন সেন্টু, বিএনপি নেতা জাফরুল্লাহ খান সাচ্চু, সিরাজুল ইসলাম, শাহজালাল বাবলু, রেহানা আক্তার, স ম আব্দুর রহমান, শেখ আমজাদ হোসেন, অধ্যাপক আরিফুজ্জামান অপু, নজরুল ইসলাম বাবু, মহিবুজ্জামান কচি, শফিকুল আলম তুহিন, শাহিনুল ইসলাম পাখী, মুজিবর রহমান, শের আলম সান্টু, সাদিকুর রহমান সবুজ, শেখ সাদী, বিপ্লবুর রহমান কুদ্দুস, কে এম হুমায়ুন কবির, একরামুল হক হেলাল, আব্দুল আজিজ সুমন, শামসুজ্জামান চঞ্চল, শরিফুল ইসলাম বাবু, হেলাল আহমেদ সুমন, নিয়াজ আহমেদ তুহিন, আবু সাঈদ শেখ, আবু সাঈদ হাওলাদার আব্বাস, আহসানউল্লাহ বুলবুল, শেখ ইমাম হোসেন, এ্যাড. মোহাম্মদ আলী বাবু, মোস্তফা কামাল, নাসির খান, ওয়াহিদুর রহমান দীপু, মাজেদা খাতুন, কাজী মাহমুদ আলী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
No comments:
Post a Comment