দ্রুত বয়ে চলা জীবনে রয়েছে অতিরিক্ত কাজের চাপ। সব মিলিয়ে দিন শেষে চলে আসে স্ট্রেস! আর তার ফলশ্রুতিতে শরীরে দেখা দিচ্ছে নানা রকমের সমস্যার। ঠিক তেমনি একটি সমস্যা হল হাই ব্লাড প্রেসার বা উচ্চ রক্ত চাপ অথবা হাইপার টেনশন। আজকাল এই সমস্যায় অনেকেই ভুগে চলছেন।সবচেয়ে বড় কথা এই সমস্যা এখন আর বয়স মানে না। আট থেকে আশির মধ্যেই দেখা দিতে হাই ব্লাড প্রেসার নামক এই বাজে রোগটি।
রক্ত চাপ যখন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়, তখন উচ্চ রক্তচাপ হয়। মস্তিস্ক মেরুজল হৃৎপিণ্ডের তৃতীয় অংশ থেকে ওপরে উঠে স্নায়ুতন্ত্রে প্রবেশ করে। যখন মস্তিষ্ক মেরুজলে লবণের পরিমাণ বেড়ে যায়, তখন বহির্গত নালির বাল্বের ভেতরে অবস্থিত চুলের মতো সূক্ষ কোষগুলো শক্ত হয়ে যায়। এর ফলে মস্তিষ্ক মেরুজলের প্রবাহ ব্যাহত হয়। হৃৎপিণ্ডের তৃতীয় অংশে এই মস্তিষ্ক মেরুজলকে ওপরে ঠেলার জন্য যে চাপের সৃষ্টি হয় তাই উচ্চ রক্তচাপ। তথ্যঃ infopedia.com.bd

হাই প্রেসার কি এবং কেন হয়
হাইপারটেনশন বা হাই ব্লাড প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ একটি জটিল দীর্ঘস্থায়ী (ক্রনিক) স্বাস্থ্যগত সমস্যা যার ফলে শরীরের রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। একে সাইলেন্ট কিলারও বলা হয়ে থাকে। এমন কোন বাসা খুজে পাওয়া দুষ্কর যে বাসার প্রেসারের রোগী পাওয়া যাবে না। রক্তস্রোত রক্তনালীর দেওয়ালে যে চাপ সৃষ্টি করে সেটিই রক্তচাপ।
স্বাভাবিক অবস্থায় রক্ত চাপের পরিমাপ ১২০/৮০। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই রক্তচাপ খানিকটা বাড়তে থাকে। তবে স্বাভাবিক পরিমাপের থেকে আর একটু বেশি চাপকেও স্বাভাবিক বলে ধরা হয়। কিন্তু উপরের চাপ মানে সিস্টোলিক ১৪০-এর বেশি , নীচের রক্ত চাপ তথা ডায়াস্টোলিক ৯০-এর বেশি হয় তাহলে সেটি মুসকিল । এই অবস্থাটাকে হাই ব্লাড প্রেশার বলে ।
উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসার এক মুহুর্তেই ডেকে নিয়ে আসতে পারে চরম পরিণতি। করোনারি হার্ট ডিজিজ, হার্টফেল, স্ট্রোক, কিডনি অকেজো ইত্যাদি মারাত্মক সমস্যাগুলো উচ্চ রক্তচাপের কারনে দেখা দিতে পারে । কেন হাই ব্লাড প্রেসার হয় ?বাংলাদেশ আকুপ্রেশার সোসাইটির আকুপ্রেশার বিশেষজ্ঞ মনোজ সাহা বলেন
রক্ত চাপ যখন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়, তখন উচ্চ রক্তচাপ হয়। মস্তিস্ক মেরুজল হৃৎপিণ্ডের তৃতীয় অংশ থেকে ওপরে উঠে স্নায়ুতন্ত্রে প্রবেশ করে। যখন মস্তিষ্ক মেরুজলে লবণের পরিমাণ বেড়ে যায়, তখন বহির্গত নালির বাল্বের ভেতরে অবস্থিত চুলের মতো সূক্ষ কোষগুলো শক্ত হয়ে যায়। এর ফলে মস্তিষ্ক মেরুজলের প্রবাহ ব্যাহত হয়। হৃৎপিণ্ডের তৃতীয় অংশে এই মস্তিষ্ক মেরুজলকে ওপরে ঠেলার জন্য যে চাপের সৃষ্টি হয় তাই উচ্চ রক্তচাপ। তথ্যঃ infopedia.com.bd
রক্ত চাপ বৃদ্ধির ফলাফল
রক্ত চাপ দু’ভাবে বাড়তে পারে। অ্যাকিউট আর ক্রনিক রক্ত চাপ । হঠাৎ কোন উত্তেজনার বশে বা অন্য কোন কারণে রক্তের চাপ খুব বেশি বেড়ে যেতে পারে। এটিকে বলে অ্যাকিউট হাই ব্লাড প্রেসার। এর কয়ারনে আচমকা হার্ট ফেলিওর হতে পারে। এমন কি স্ট্রোকও হতে পারে।
ক্রনিক হাই ব্লাড প্রেসারের ক্ষেত্রে রক্তের চাপের পরিমাপ স্বাধারনত হঠাৎ করে খুব বেশি বাড়ে না । কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে রক্তের উচ্চচাপ থাকার ফলে হার্টের পেশির ক্ষতি হতে পারে। কারণ, বেশি রক্ত পাম্প করতে থাকলে হার্টের ওপর বেশি চাপ পড়ে। এ ছাড়া অনেক দিন ধরে উচ্চ রক্তচাপে ভুগলে রক্তনালীগুলো শক্ত হয়ে যেতে পারে । ফলে সেগুলোর স্থিতিস্থাপকতা কমে যাবে। রক্তনালীর ভেতরের দেওয়াল মোটা হয়ে যায় এর ফলে ব্লক তৈরি হয়। সব মিলিয়ে হার্ট ফেলিওর বা হার্ট অ্যাটাক হয়ে যায়।
আবার রক্তনালীতে ‘ব্লক’ তৈরি হওয়ার ফলে বা বেশি রক্তচাপের কারণে নালীর মধ্যে রক্ত জমাট বেধে যেতে পারে। সেই জমাট বাধা রক্ত বা ক্লট মাথায় পৌঁছে ব্রেইন স্ট্রোক হতে পারে। আবার রক্তের চাপ সহ্য করতে না পেরে কোনও ধমনি ছিঁড়ে গিয়েও স্ট্রোক হতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপের লক্ষন
উচ্চ রক্ত চাপে সবার সিম্পটম এক না তবুও কমন কিছু সিম্পটম বা লক্ষন হল
মাথব্যাথা
মাথা ব্যাথা বিশেষ করে মাথার পিছনের দিকে ব্যাথা রক্তচাপের একটি লক্ষন । অনেক সময় দেখা যায় সকালে ঘুম থেকে উঠার পরে ব্যাথা শুরু হয় কয়েক ঘন্টা স্থায়ী হয়ে ব্যাথা আবার চলে যায় ।
মাথা ঘুরা
নিয়মিত মাথাঘুরাও রক্তচাপের একটি লক্ষণ ।
বুক ধড়ফড় করা
অনেক সময় এমনিতেই হটাত বুক ধড়ফর করে । তবে এটি নিয়মিত হলে আমাদের মাথায় রাখতে হবে যে এটি উচ্চ রক্ত চাপের একটি লক্ষণ হতে পারে।
মনোযোগের অভাব
কাজ করতে গিয়ে প্রায়শই যদি মনোযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তাহলে এটি চিন্তার বিষয় । হতে পারে এটি উচ্চ রক্ত চাপের ফলেই হচ্ছে।
নাক দিয়ে রক্ত পড়া
ব্যাথা পাওয়া ছাড়া যদি হটাত কারো নাক দিয়ে রক্তে পড়া শুরু হয় সেটি একটি শারিরিক অসুস্থতার লক্ষন । এর পিছনে থাকতে পারে উচ্চ রক্তচাপ নামক নিরব ঘাতক।
ঘাড় ব্যাথা
উচ্চ রক্ত চাপের একটি উল্লেখযোগ্য লক্ষণ হল ঘাড় ব্যাথা করা। বেশি ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় ঘাড় ব্যাথার কারন হল উচ্চ রক্ত চাপ।
এ ছাড়াও উচ্চ রক্ত চাপের অন্য লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে অল্পতে হাঁপিয়ে উঠা, পা ফুলে যাওয়া, বুকে ব্যাথা, মাংসপেশিতে দুর্বল অনুভব করা, ক্লান্তিবোধ করা।
হাই প্রেসার হতে কিছু সম্ভাব্য কারন
০১। প্রতিদিন ৬ গ্রামের বেশি লবণ গ্রহণ করা ।
০২। নিয়মিত অ্যালকোহল গ্রহণ করা।
০৩. প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অনেক বেশি ক্যাফেইন জাতীয় খাদ্য থাকা।
০৪। স্ট্রেস
০৫।. বংশগত ভাবে অনেকেই হাই ব্লাড প্রেশারে ভুগে থাকে।
হাই প্রেসারে যে সব খাওয়া উচিত

যাদের উচ্চ রক্ত চাপ আছে তারা নিয়ম করে ওষুধ সেবন করলে ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করলে তা নিয়ন্ত্রণে থাকতে পারে। আবার কিছু খাবার আছে যেগুলো উচ্চ রক্ত চাপে আক্রান্ত কেউ নিয়মিত খেলে তার উচ্চ রক্তচাপ কমে যেতে পারে । হাই ব্লাড প্রেসার প্রতিরোধ করতে হলে অবশ্যই খাবারে পটাশিয়ামের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে হবে। পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যেমন লেবু, কমলালেবু, টমেটো, কলা, ডাবের পানি ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। সবুজ শাক-সবজি, লো ফ্যাট জাতীয় খাবার যেমন ফ্যাটমুক্ত দই, বাটারমিল্ক, আইসক্রিম ও লো স্যাচুরেটেড ফ্যাট জাতীয় খাবার, যেমন মুড়ি খেতে পারেন। চলুন দেখে নেওয়া যাক সেই খাবারগুলোঃ
লেবুঃ লেবুতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, আর ভিটামিন সি’তে ভরপুর পাতিলেবু হৃদযন্ত্রের সূক্ষ্ম নলগুলির শক্তি বাড়ায়। এতে হাই প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে। সকালে ঘুম থেকে উঠে একটা লেবুর রস সমান পানিতে মিশিয়ে খেতে পারলে ভাল হয়। খাবারের মধ্যেও লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারেন।
আঙুরঃ পটাশিয়াম প্রাকৃতিক মূত্রবর্ধনকারী উপাদান , এটি কিডনি থেকে সোডিয়াম নিঃসরণ করে ও রক্তনালী শিথিল করে দেয়। পটাশিয়াম ও ফসফরাসে পরিপূর্ণ আঙুর উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
পেঁয়াজঃ পেঁয়াজে এক ধরনের অ্যান্টি অক্সিজেন ফ্লাডানয়েড থাকে, যা ব্লাড প্রেসার কমাতে সহায্য করে। আবার পেঁয়াজ রয়েছে পেশি শিথিলকারী উপাদান অ্যাডেনোসিন। যা হাইপারটেনশনের রোগীদের চিকিৎসায় ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে। কাঁচা পেঁয়াজ রস বানিয়ে খাওয়া যেতে পারে আবার কারো কাছে রসের স্বাদ ভালো না লাগলে তাতে সামান্য মধু মিশিয়ে পান করতে পারেন।
রসুনঃ রসুন ধমনী ও শিরায় জমে থাকা কোলেস্টেরল গলিয়ে দিতে সাহায্য করে ফলে রক্ত প্রবাহ বেড়ে যায় । যার ফলে এটি ব্লাড প্রেসার কমানোর ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে। সকালে খালি পেটে এক কোয়া রসুন চিবিয়ে পানি খেলে রক্তচাপ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকে
কলাঃ আমরা জানি পটাশিয়াম হাই ব্লাড প্রেসার কমিয়ে দিতে পারে। একটি কলায় ৪৫০ মিলিগ্লাম পটাশিয়াম থাকে। তাই প্রতিদিন কলা খেলে হাই ব্লাড প্রেসারের সমস্যা ধীরে ধীরে কমে যাবার সম্ভাবনা থাকে।
ডাবের পানি : ডিহাইড্রেশন, দুর্বলতা সহ নানা অসুস্থ রোগিকে আমরা ডাবের পানি পান করাই। ডাবের পানিতে রয়েছে পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ক্যালশিয়াম, ভিটামিন সি ও অন্যান্য নিউট্রিয়েন্টস্। এই উপাদানগুলো উচ্চ রক্তচাপ কমতে সাহায্য করে।
ধনেপাতাঃ ধনে পাতাতে প্রচুর পরিমাণে বায়োঅ্যাকটিভ রয়েছে। যেমন – অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট, অ্যান্টিইনফ্লেমেটারি ও হতাশা কমানোর উপাদান। তাই ধনেপাতা খেলে কমে যেতে পারে ডায়াবিটিজ়, কোলেস্টেরলের সমস্যাও। আর কোলেস্টরলে কমলে ধমনিতে রক্ত প্রবাহ বাড়বে ফলে রক্ত চাপ কমবে।
তরমুজঃ তরমুজে আছে আরজিনাইন। এটি একটি অ্যামিনো অ্যাসিড যা উচ্চ রক্তচাপ কমতে সাহায্য করে। তাই তরমুজের সিজনে তরমুজ গ্রহন করলে হাইপারটেশন কমতে পারে।
নিম ও তুলসীঃ নিমের দুটি পাতা ও তুলসীর দু’টো পাতা বেটে, তার সঙ্গে অল্প পানি মিশিয়ে প্রতিদিন খেলে রক্তচাপ কমে৷ খালি পেটে সপ্তাহখানেক খেলেই এর উপকারিতা বোঝা যাবে৷
যে খাবারগুলো উচ্চ রক্ত চাপের রোগীর এড়িয়ে চলা উচিত
কিছু খাবার আছে যেগুলো গ্রহণ করলে উচ্চ রক্ত চাপ বেড়ে যেতে পারে। উচ্চ রক্ত চাপে ঐ সব খাবার এরিয়ে চলতে হবে। দেখে নেওয়া যাক সে সব খাবারগুলো
লবণঃ উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় প্রথমেই যে খাবারটি খেতে মানা করা হয় তা হলো লবণ। লবণে থাকে সোডিয়াম । আর সোডিয়ামের কারনে রক্ত চাপ দ্রুত বেড়ে যায়। যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে তাদের জন্য লবণ খুবই ক্ষতিকরউপাদান হিসেবে বিবেচিত। রান্না করা খাবারে যথেষ্ট পরিমাণে সোডিয়াম থাকে। তার ওপর কাঁচা লবণ খেলে ব্লাড প্রেসার বেশি মাত্রায় বেড়ে যায়। আমাদের শরীরে ১ চা চামচ লবণই যথেষ্ট ।
খাবারে অতিরিক্ত লবণ খেলে হৃৎপিণ্ডের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ ও অন্যান্য সমস্যার সৃষ্টি হয় শরীরে। এছাড়াও আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে খাবারে অতিরিক্ত লবণ খেলে পাকস্থলী ও মুত্রথলীর ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। তাই যথা সম্ভব লবণ ও অতিরিক্ত লবণজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
আচারঃ যে কোনো খাবার সংরক্ষণ করতে প্রিজারভেটি হিসেবে প্রচুর লবণের দরকার পড়ে। আমাদের দেশে যে ধরণের আচার বানানো হয় সেগুলোতে প্রচুর পরিমাণে লবণ ব্যবহৃত হয়। লবন রক্ত চাপ বাড়িয়ে দেয়, তাই খেতে যতই ভালো লাগুকনা কেন কারো যদি উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকে তাহলে আচার খাওয়া এড়িয়ে চলাই উত্তম। 🙂
কফিঃ গবেষকদের মতে ক্যাফেইন রক্তনালীকে সরু করে দেয়। এছাড়াও ক্যাফেইন প্রচুর কর্টিসল ও অ্যাড্রেনালিন নিঃসরণ করে রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয় এবং শরীরের নরম টিস্যুতে প্রভাব ফেলে। তাই যারা নিয়মিত কফি খান এবং যাদের উচ্চরক্তচাপের সমস্যা আছে তাদের জন্য কফি খাওয়া বেশ ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়া রক্তচাপের ফলে শরীরের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই উচ্চ রক্তচাপ থাকলে কফি ও অতিরিক্ত চা পানের অভ্যাসটা বাদ দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে গ্রীন টি বা সবুজ চা পান করতে পারেন। । বিশেষ করে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে যতটা সম্ভব ক্যাফিন যুক্ত খাদ্য এড়িয়ে চলতে হবে।
চিনিঃ নিয়মিত যারা চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার খায় তাদের বেশিরভাগ লোকের শরীরে এটি চর্বি হিসেবে জমা হয়। ফলে শরীরের ওজন বেড়ে স্থুলতা দেখা দেয় এবং হৃদরোগ ও ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলে। আর অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার খেলে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে। বিশেষ করে যারা স্থুলকায় তাদের প্রেসার বাড়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। তাই মিষ্টি কিছু যদি খেতেই ইচ্ছেই হয় তবে চিনির বদলে মধু খেতে পারেন।
গরু, ভেড়া ও ছাগলের মাংসঃ উচ্চ রক্তচাপের সমস্যার প্রধান উৎস হলো চর্বি ও ট্রান্স ফ্যাট জাতিয় খাবার। ফ্যাট জাতীয় খাবার খেলে রক্তনালীতে চর্বি জমে রক্ত নালী সরু হয়ে যায়। আর গরু, ভেড়া ও ছাগলের মাংসে প্রচুর পরিমানে চর্বি বিদ্যমান। উচ্চ রক্তচাপ এড়িয়ে চলতে চর্বি এবং ট্রান্স ফ্যাট সম্পৃক্ত খাবার খেতে চিকিত্সকরা রোগীদের বিড়ত থাকার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আবার এই লাল মাংস প্রস্টেট স্বাস্থ্যেও বিরূপ প্রতিক্রয়া ফেলে । তাই গরু, ভেড়া ও ছাগলের মাংস যতোই পছন্দের খাবার হোক না কেন তা আপনাকে বাদ দিতে হবে । এর পরিবর্তে আপনি খাদ্যের তালিকার মধ্যে মাছ যোগ করতে পারেন।
মসলাযুক্ত খাবারঃ অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার উচ্চ রক্তচাপের সমস্যার ক্ষেত্রে ক্ষতিকারক তাই যতটা সম্ভব এগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।
কোমল পানীয় ও অ্যালকোহলঃ গবেষণায় দেখা গেছে যে অতিরিক্ত মদ পান করলে রক্তচাপ অনেক বেড়ে যায় যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তাছাড়া এটাও মনে রাখা উচিত যে অ্যালকোহল ও কোমল পানীয়গুলোতে প্রচুর ক্যালোরি আছে যা ওজন বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। তাই অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় কিংবা কোমল পানীয় না খেয়ে তাজা ফলের রস কিংবা লেবুর শরবত খাওয়া যেতে পারে।
প্রক্রিয়াজাত মাংসঃ সংরক্ষণ করা মাংসে অতিরিক্ত পরিমাণে লবণ যোগ করা হয়। আবার এই মাংস যখন রান্না করে বা গ্রিল করে খাওয়া হয় তখন শরীরে অতিরিক্ত লবণ প্রবেশ করে, যা উচ্চ রক্তচাপ রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। তাই প্রক্রিয়াজাত মাংস খাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে।
রেস্টুরেন্টের খাবারঃ রেস্টুরেন্টের খাবারে স্বাদ বাড়ানোর জন্য প্রচুর পরিমাণে টেস্টিং সল্ট ব্যবহার করা হয়ে থাকে। টেস্টিং সল্ট খাবারের স্বাদ বাড়িয়ে খাবার সস্বাদু করলেও খাবারের পুষ্টিমান কমিয়ে ফেলে। তাই রেস্টুরেন্টের খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।
প্রেসার নিয়ন্ত্রণ
প্রেসার পুরুপুরি নিরাময়যোগ্য নয় তবে নিয়মিত কিছু জিনিস মেনে চললেই এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণে চলে আসতে পারে।
## সপ্তাহে অন্তত ১ দিন ১ ঘণ্টা করে জগিং করলে ৬ বছর পর্যন্ত আয়ু বাড়তে পারে বলে জানা গেছে।। এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, জগিং-এর সময় অক্সিজেন গ্রহণের পরিমাণ বাড়ে যার ফলে উচ্চ রক্তচাপ কমে। আর অক্সিজেন শরীরের রক্তের সঙ্গে মিশে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। এতে হৃৎপিণ্ড সহজেই রক্ত পাম্প করে পুরো দেহকে সতেজ রাখে। তাই জগিং করুন আর যারা জগিং করতে পারেন না তারা দ্রুত হাঁটার অভ্যাস করুন। এতে প্রচুর অক্সিজেন আপনার ফুসফুসে প্রবেশ করবে।
## প্রতিদিন এক কাপ পরিমাণ চিনি ছাড়া দি বা অল্প চিনি যুক্ত দই উচ্চ রক্তচাপ প্রায় এক তৃতীয়াংশ কমিয়ে দিতে পারে। দইয়ের ক্যালসিয়াম ধমনীকে নমনীয় ও প্রসারিত করে। এতে করে রক্ত কোনো প্রকার বাধা ও চাপ ছাড়াই পুরো দেহে সঞ্চালিত হতে পারে। এতে করে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা কমে যায়।
## পূর্বেই জেনেছি পটাশিয়াম রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম যা দেহের লবণের পরিমাণ ঠিক রাখে। গবেষণা অনুযায়ী, কলার পটাসিয়াম শরীরে তরল পদার্থের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে এবং উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। তাই সপ্তাহে অন্তত ৫টি কলা উচ্চ রক্তচাপের কারণে মৃত্যু ঝুঁকি কমায়।
## লবণ ধমনীতে বিদ্যমান তরলের সাথে মিশে গিয়ে তরলের আয়তন বৃদ্ধি করে ।কিন্ত রক্ত নালীর আয়তন তো বাড়ে না । এতে করে রক্ত সঞ্চালিত হওয়ার সময় ধমনীতে চাপ পড়ে। ফলশ্রুতিতে রক্ত চাপ বাড়ে। তাই যতটা সম্ভব লবণ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
## খাওয়া-দাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। একবার উচ্চতা অনুযায়ী ওজন পৌঁছলে সীমিত আহার করা উচিত এবং ব্যায়াম অব্যাহত রাখতে হবে। শুধুমাত্র ওষুধ খেয়ে ওজন কমানো বিপজ্জনক। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওজন কমানোর ওষুধ না খাওয়াই উত্তম।
## ধূমপান উচ্চ রক্তচাপের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। সিগারেটে থাকা নিকোটিন দেহে প্রবেশ করে রক্তে মিশে গিয়ে অ্যাড্রেনালিন উৎপন্ন করে। এড্রেনালিন হৃদস্পন্দন দ্রুততর করে ফেলে। যার ফলে রক্তচাপ বেড়ে যায়। তাই উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থেকে দূরে থাকতে ধূমপান পরিহার করুন।
## রোগ নিয়ন্ত্রণে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন অত্যন্ত জরুরি। সঠিক নিয়ম মেনে সময়মতো পরিমিত খাবার খেলে এবং জীবনযাত্রার ধরন পরিবর্তন করে সহজেই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। উপরে বর্ণিত খাবার তালিকা অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণ ও পরিহার করুন।
## ডাক্তারকে দিয়ে নিয়মিত রক্ত চাপ চেক আপ করাবেন। । শরীরচর্চা শুরুর আগে ডাক্তারের অনুমতি নিতে হয়। যে সব ব্যায়াম ভাল লাগে সেসব ব্যায়াম সপ্তাহের প্রায় প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে করলে ভালো হয়। দৈনন্দিন গৃহকর্ম, বাগান করা, জানালা ধোয়া, সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠা, মুদির দোকান থেকে জিনিসপত্র বহন করে আনা, হাঁটা, সাইকেল চালানো সবই আনন্দের ব্যায়াম যে গুলো খুব উপকারী। গাড়ি কিছু দূরে পার্ক করে হেটে অফিস যাওয়া, বাসে গেলে এক স্পট আগে নেমে হেটে অফিস যাওয়া বেশ উপকারি।
হটাৎ রক্ত চাপ বেড়ে গেলে
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে বেশিরভাগ মানুষ চিন্তিত থাকেন৷ সাধারণত একজন সুস্থ মানুষের রক্তচাপ থাকে ১২০/৭০ থেকে ১৪০/৯০ এর মধ্যেই৷কোন কারনে এর কম বেশি হলে ধরা হয় যে তার রক্ত চাপ আছে। নিম্ন রক্তচাপেও যেমন নানারকম শারীরিক ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, তেমনি উচ্চ রক্তচাপের ক্ষেত্রে সে ক্ষতির পরিমাণ কয়েকগুণ বেশি৷ হৃদযন্ত্র বিকল হওয়া, কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে মস্তিষ্কের ক্ষতির মতো মারাত্মক ঘটনা ঘটতে পারে উচ্চ রক্তচাপের কারণে৷
তাই যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তারা নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে৷সুস্থ একজন ব্যক্তির হঠাৎ রক্তচাপ বেড়ে গেলে তাঁকে অবশ্যই বিশ্রাম নিতে হবে। এসব ক্ষেত্রে কেউ কেউ মাথায় পানি দিয়ে বা বরফ দিয়ে আরাম পেতে পারেন। অনেকে তেঁতুলের শরবত খেয়ে থাকেন। তবে মনে রাখা প্রয়োজন তেতুলের শরবত বা লেবুর শরবত যাই খান না কেন লবণ ছাড়া খেতে হবে। কারন লবণ রক্তে সোডিয়ামের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।যা উচ্চ রক্ত চাপের একটি প্রধান কারন।
চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে অবশ্যই। আর যাঁদের আগে থেকেই রক্তচাপ জনিত সমস্যা আছে, তাঁদের হঠাৎ রক্তচাপ বেড়ে গেলেও অস্থির না হয়ে বিশ্রাম নেওয়া উচিত। মাথায় পানি বা বরফ দিয়ে সাময়িক উপশম হলেও অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তবে নিজে থেকে রক্তচাপ কমানোর জন্য কোনো ওষুধ গ্রহণ করবেন না বরং ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
শেষ কথা
উচ্চ রক্তচাপ ভয়ংকর পরিণতি ডেকে আনতে পারে। অনেক সময় উচ্চ রক্তচাপের কোনো প্রাথমিক লক্ষণ দেখা যায় না। নীরবে উচ্চ রক্তচাপ শরীরের বিভিন্ন অংশকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এ জন্যই উচ্চ রক্তচাপকে ‘নীরব ঘাতক’ বলা হয় । অনিয়ন্ত্রিত এবং চিকিৎসাবিহীন উচ্চ রক্তচাপ থেকে মারাত্মক শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত না থাকলে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ চারটি অঙ্গে মারাত্মক ধরনের জটিলতা হতে পারে।এই চারটি অংগ হল—হূৎপিণ্ড, কিডনি, মস্তিষ্ক ও চোখ। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ থেকে হূদ্যন্ত্রের মাংসপেশি দুর্বল হয়ে যেতে পারে। দুর্বল হূদ্যন্ত্র রক্ত পাম্প করতে পারে না এবং এ অবস্থাকে বলা হয় হার্ট ফেইলিওর। রক্তনালির গাত্র সংকুচিত হয়ে হার্ট অ্যাটাক বা ইনফার্কশন হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপের কারণে কিডনি নষ্ট হয়ে যেতে পারে, মস্তিষ্কে স্ট্রোক হতে পারে, রোগীর মৃত্যুর কারনও হতে পারে। এ ছাড়া চোখের রেটিনাতে রক্তক্ষরণ হয়ে রোগী চিরকালীন অন্ধত্ব বরণ করতে পারে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত না থাকলে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ চারটি অঙ্গে মারাত্মক ধরনের জটিলতা হতে পারে।এই চারটি অংগ হল—হূৎপিণ্ড, কিডনি, মস্তিষ্ক ও চোখ। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ থেকে হূদ্যন্ত্রের মাংসপেশি দুর্বল হয়ে যেতে পারে। দুর্বল হূদ্যন্ত্র রক্ত পাম্প করতে পারে না এবং এ অবস্থাকে বলা হয় হার্ট ফেইলিওর। রক্তনালির গাত্র সংকুচিত হয়ে হার্ট অ্যাটাক বা ইনফার্কশন হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপের কারণে কিডনি নষ্ট হয়ে যেতে পারে, মস্তিষ্কে স্ট্রোক হতে পারে, রোগীর মৃত্যুর কারনও হতে পারে। এ ছাড়া চোখের রেটিনাতে রক্তক্ষরণ হয়ে রোগী চিরকালীন অন্ধত্ব বরণ করতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ আমেরিকার মত দেশে তিন জনে একজনের হলেও আমাদের দেশেও এ সংখ্যাটা নেহায়েত কম নয়। সঠিক পরিসংখ্যাণ নেই তবে উচ্চ রক্তচাপের রোগী যে কত তা গুণে শেষ করা কঠিন।ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্যকর সঠিক খাবার হল উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধের গুরুত্বপূর্ণ উপায়।
তথ্য সূত্রঃ ইন্টারনেট
No comments:
Post a Comment