বিজ্ঞান-প্রযুক্তি রিপোর্ট : মহাকাশে মানব শিশু জন্মদানের বিষয়টি নতুন কোনো সায়েন্স ফিকশন সিনেমার কাহিনি মনে হতে পারে। কিন্তু বাস্তবেই বিজ্ঞানীরা এমন উদ্যোগ নিয়েছেন।
বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস, মাত্র ৬ বছরের মধ্যে এটি বাস্তব হতে পারে। ‘স্পেসলাইফ অরিজিন’ নামক জীব-প্রযুক্তি বিষয়ক একটি গবেষণা সংস্থার বিজ্ঞানীরা ২০২৪ সালের মধ্যে মহাকাশে মানব শিশু জন্মদানের প্রকল্পের ঘোষণা দিয়েছে। এজন্য উপযুক্ত নারী স্বেচ্ছাসেবক খুঁজছে সংস্থাটি।
স্পেসলাইফ অরিজিনের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী কেস মুলদার বলেন, ‘মানব জাতি যদি বহু-গ্রহীয় প্রজাতি হতে চায়, তাহলে আমাদের বংশবৃদ্ধি করা শিখতে হবে।’
সংস্থাটি তিনটি ধাপে এই প্রকল্প বাস্তব করবে। প্রথম ধাপে ২০২০ সালে জন্মদান সংক্রান্ত মানব কোষ নিয়ে বিকিরণ প্রতিরোধী টিউবে গবেষণা করবে। দ্বিতীয় ধাপে একটি স্পেস এমব্রায়ো ইনকিউবেটর অর্থাৎ মহাকাশে ভ্রুণ পরিচর্যা সিস্টেম তৈরি করবে, যার মধ্যে হিমায়িত শুক্রাণু ও ডিম্বাণু বহন করে ২০২১ সালে মহাকাশে পাঠানো হবে।
মহাকাশে পৌঁছানোর পর সিস্টেমটির মধ্যে কৃত্রিম প্রক্রিয়ায় মানব ভ্রুণ গঠন হওয়া শুরু হবে। চার দিন পর পৃথিবীতে ফিরিয়ে এনে ভ্রুণটি পরীক্ষা করা হবে এবং কোনো স্বেচ্ছাসেবক নারীর গর্ভে স্থাপন করে সেই ভ্রুণ থেকে পৃথিবীতে শিশু জন্মদান করানো হবে।
তৃতীয় ধাপ হিসেবে ২০২৪ সালে স্বেচ্ছাসেবক কোনো গর্ভবর্তী নারীকে সরাসরি পাঠিয়ে মহাকাশে প্রথমবারের মতো শিশু জন্মদান করানো হবে। ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার এই মিশনে গর্ভবর্তী একজন নারী পৃথিবী থেকে ২৫০ মাইল উপরে সন্তান জন্ম দেবে। তার সঙ্গে থাকবে প্রশিক্ষিত চিকিৎসক দল। এক্ষেত্রে সব ধরনের সম্ভাব্য ঝুঁকি কমাবে খুবই সচেতনার সঙ্গে তৈরি করা নজরদারি ব্যবস্থা।
এটি বেশ ব্যয়বহুল একটি প্রকল্প। স্পেসলাইফ অরিজিন জানিয়েছে, মহাকাশে ভ্রণ তৈরির প্রক্রিয়াটির ক্ষেত্রে ২৫০,০০০- ৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয় ধরা হয়েছে। তাই ধারণা করা হচ্ছে, শিশু জন্মদানের প্রক্রিয়াটির ক্ষেত্রে খরচ আরো বেশি হবে।
কেন এই উদ্যোগ?
বিশ্বের খ্যাতনামা মহাকাশ সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলো ইতিমধ্যে কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ করে ফেলেছে মহাকাশে ভ্রমণ, বসবাস এবং অন্যান্য গ্রহে (যেমন মঙ্গল গ্রহ কিংবা চাঁদ) স্থায়ী বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য। পৃথিবীর বাইরে উপনিবেশ স্থাপনের এ ধরনের পরিকল্পনার কারণ হলো, পরবর্তী শতাব্দীতে পৃথিবীতে জীবনযাপন খুব চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। সুতরাং পৃথিবীর বাইরে স্থায়ী বসতি স্থাপনের প্রচেষ্টা যেন টেকসই হয় সেজন্য স্পেসলাইফ অরিজিন মানুষের প্রজনন সম্পর্কিত স্থান অনুসন্ধান ও প্রজনন বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে। মানবজাতির ভবিষ্যতের জন্য এটি বিশ্বের অভিনব এবং সমালোচনামূলক একটি পদক্ষেপ। (তথ্যসূত্র : মিরর)
No comments:
Post a Comment